প্রকাশিত: ০৭/১০/২০১৭ ৭:৩০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৩৫ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহরের ৫টি মুসলিম মহল্লায় অগ্নিসংযোগ করেছে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা। এতে পুড়ে গেছে অন্তত ৩ শতাধিক ঘর-বাড়ি । তবে কোনও প্রাণহানীর মত ঘটনার খবর জানা যায়নি।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার সকালে এ সব অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

মোবাইলে মংডুর স্থানীয় রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, মংডু শহরের ৩নং ওয়ার্ডের সিনেমা হলের পূর্ব পাশের মুসলিম মহল্লায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অগ্নিসংযোগ করে। এর পর নয়াপাড়া, পূর্ব পাড়া, পশ্চিম পাড়া ও সুন্দরী পাড়ায় আগুন দেয় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার সময় মংডু শহরের উত্তরে দিকে মাঙ্গালা পাড়ায় আগুন দেয় সেনা সদস্যরা। এ সময় শতাধিক রাখাইনরা মুসলিম বিরোধী স্নোগান দিয়ে রোহিঙ্গাদের ধাওয়া করে।

শহরের অভ্যন্তরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা হলেও ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

তারা বলছেন, মিয়ানমার বাহিনীর নৃশংসতা শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম আগেভাগে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ পালিয়ে গেছে। সাহস করে যারা থেকে গিয়েছিল, এবার তাদের উপর শুরু হয়েছে নির্যাতন। যাতে তারাও পৈত্রিক ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু অঞ্চলের ৯০ ভাগ গ্রাম রোহিঙ্গা শূন্য হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের ৭০ ভাগ বসতি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ও দেশটির সেনারা । রোহিঙ্গাদের ছেড়ে যাওয়া কিছু কিছু উন্নতমানের দ্বিতল কাঠের বাড়িঘর অক্ষত রাখা হয়েছে। সেসব দখলে নিচ্ছে স্থানীয় বৌদ্ধ রাখাইনরা।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদের উপকূলে এখনো হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষয় রয়েছেন। টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রশাসন নজরদারী বৃদ্ধি ও স্থানীয় মানব পাচারকারী দালালদের উপর অভিযান পরিচালিত হওয়ায় কয়েকদিন ধরে শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থমকে রয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো: মাইন উদ্দিন খান জানিয়েছেন, গত দুদিনে টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপ এলাকা দিয়ে পুলিশ বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা অভিযান চালিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি দালালকে আটক করেছে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকে নাফ নদী দিয়ে ট্রলার যোগে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থমকে দাঁড়িয়েছে।

অপর দিকে, মিয়ানমার সীমান্তের লোকজন ফেইসবুক বার্তায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে নাফ নদী সীমান্ত দিয়ে তাদের উদ্ধার করে বাংলাদেশে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন অব্যাহত রেখেছে।

টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্টের খারিয়াখালী পয়েন্টে নিয়োজিত পুলিশ পোস্টের এএসআই মো: ইয়াকুব শীর্ষনিউজকে জানান, সকাল থেকে মিয়ানমারের নতুন কোনও রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করেছে এমন সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে আগে থেকে আসা ৭০/৮০ জন রোহিঙ্গাকে ওই স্থানে জড়ো হতে দেখা গেছে।
মংডুতে দোকানপাট এখনো বন্ধ

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা নিধন শুরুর পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। ঘটনার পর পরই সেখন থেকে সরিয়ে নেয়া হয় আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলোর সকল কর্মকর্তা ও কর্মী বাহিনীকে। বন্ধ করে দেয়া হয় সব এনজিও কার্যক্রম।

একটি সূত্র জানিয়েছে, শুধু রেড ক্রসের কর্মীরা ওখানে রয়েছে। অন্যদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে জেলা শহর সিটুয়েতে (আকিয়াব)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিয়ানমারে কর্মরত এক এনজিও কর্মকর্তা জানিয়েছেন. অক্টোবরের ৯/১০ তারিখের দিকে আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি সম্ভাব্য হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা করছে স্থানীয় মিয়ানমার প্রশাসন।

তিনি আরো জানান, সিটওয়ে’তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মংডু শহরের এখনো দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। তবে রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় বৌদ্ধরা দোকানপাট চালু করেছে। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা প্রায় জনমানব শূন্য রয়েছে। তবে যে সব গ্রামে রোহিঙ্গা মুসলিমরা রয়েছে সেখানেও মুসলিমরা কিছু কিছু দোকান খুলছে বলেও জানান ওই এনজিও কর্মকর্তা।

সীমান্তে যুদ্ধের উস্কানি দিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী
আন্তর্জাতিক রীতি লঙ্ঘন করে বংলাদেশের সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সীমান্তে তারা বাংকার স্থাপন করে যুদ্ধের উস্কানি দিচ্ছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেকরা বলছেন, সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে দেশের বর্ডার গার্ড বাহিনী। সেনাবাহিনী মোতায়েন আন্তর্জাতিক রীতির লঙ্ঘন। এ অবস্থায় সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার তমব্রু সীমান্ত ঘেঁষে গত কয়েকদিন ধরে অবস্থান করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি দল। সকাল-দুপুর এবং সন্ধ্যায় দিনের তিনভাগে তাদের দায়িত্ব পরিবর্তন হচ্ছে। ট্রাকে করে ওই পয়েন্টে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পাশাপাশি আসা-যাওয়া করছে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা। বিজিপি সদস্যরা কাঁটাতার মেরামত ও স্থাপন করছে। আর সেনাসদস্যরা দূরে অবস্থান নিয়ে থাকছে। তমব্রু সীমান্ত ছাড়াও বাংলাদেশের চাকমা পাড়া এবং বাইশারী সীমান্ত এলাকায়ও অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা। তমব্রু, চাকমা পাড়া এবং বাইশারী এলাকার জিরো পয়েন্ট বা নো ম্যান্স ল্যান্ডে অন্তত ১৫ হাজার রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে।

তবে সীমান্ত পরিদর্শনে আসা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ ধরনের উস্কানিমূলক কাজে বাংলাদেশ জবাব দেবে না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন আন্তর্জাতিক রীতির লঙ্ঘন। সীমান্তে নো ম্যান্স ল্যান্ডে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে তা আন্তর্জাতিক রীতির সরাসরি লঙ্ঘন।

এদিকে সীমান্তে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, আমরা একে হুমকি মনে করছি না। আমাদের যা যা করা প্রয়োজন তা করছি।

এর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার ও ড্রোন বাংলাদেশের আকাশ সীমায় ওড়ানো, সীমান্তে স্থল মাইন স্থাপন এবং কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের মধ্য দিয়ে একাধিকবার সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করেছে।

শীর্ষনিউজ

পাঠকের মতামত